রাজশাহী শহরের তালাইমারী, কাজলা, পঞ্চবটি, পাঠানপাড়া, লালনশাহ মঞ্চ, শ্রীরামপুরসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে
রাজশাহীতে পদ্মার পানি বেড়েই চলেছে। এতে পদ্মাতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। এ ছাড়া পদ্মা নদীর চরও ডুবে গেছে। চর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অনেকে রাজশাহী শহরের দিকে আসছেন।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের শেষ দিকে রাজশাহীতে পদ্মায় পানি বাড়তে শুরু করে। গত রোববার সকাল ৬টায় পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ১৩ মিটার। গতকাল সোমবার সকাল ছয়টায় তা বেড়ে ১৭ দশমিক ৩২ মিটার এবং আজ মঙ্গলবার ১৭ দশমিক ৪৩ মিটার হয়েছে। রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক শূন্য ৫ মিটার।
প্রতিদিন সকাল ৬টা, ৯টা, দুপুর ১২টা, বেলা ৩টা ও সন্ধ্যা ৬টায় পানির উচ্চতা মাপা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক বলেন, আজ সকাল ৬টায় ১৭ দশমিক ৪৩ মিটার পানির উচ্চতা মাপা হয়েছে। বিপৎসীমা ১৮ দশমিক শূন্য ৫ মিটার।
পদ্মার পানি বেড়ে রাজশাহী শহরের তালাইমারী, কাজলা, পঞ্চবটি, পাঠানপাড়া, লালনশাহ মঞ্চ, শ্রীরামপুরসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অনেক বাসিন্দা বাড়ি ছেড়েছেন। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তালাইমারী ও পঞ্চবটি এলাকায়।
প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত রাজশাহীর আলোর পাঠশালার মাঠ পদ্মা নদীর পাড়ে। সোমবার মাঠ জলমগ্ন ছিল, আজ সকালে সেখানে হাঁটুপানি। বিদ্যালয়ের আশপাশের প্রায় সব বাড়িতে পানি উঠে গেছে। বিদ্যালয়ে দুই শিক্ষার্থীর পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
প্রধান শিক্ষক রেজিনা খাতুন বলেন, কয়েক দিন ধরে পানি বাড়ছে, বিশেষ করে গত দুই দিনে বেশি পানি বেড়েছে। এতে পাঠশালাসহ আশপাশের বাড়িতে পানি উঠেছে। দুই শিক্ষার্থীর পরিবার বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে উঠেছে।
আজ সকাল সাড়ে আটটায় স্থানীয় বাসিন্দা জুম্মন মহলদার মালপত্র রাখতে আলোর পাঠশালায় আসেন। তাঁর বাড়িতে সোমবার রাতে পানি উঠেছে। তিনি বলেন, জিনিসপত্র ঘরের ওপরের দিকে টানিয়ে রেখে এসেছেন। টেলিভিশনটি বিদ্যালয়ে রেখে যাবেন।
মিরা খাতুন নামের একজন বলেন, রাত দুইটার দিকে ঘরে পানি আসে। রাত থেকে ঘুম হয়নি। সকাল থেকে জিনিসপত্র সরাচ্ছেন। লাইলি বেগম নামে এক নারী পদ্মার বাঁধের ধারে দুই দিন ধরে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, তাঁর বাড়ি নিচু হওয়ায় দুই দিন আগে বাড়ি ছেড়েছেন। এলাকায় সাপের ভয়ও রয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পানি এবার হয়েছে।
এদিকে রাজশাহী শহর থেকে দক্ষিণে ভারত সীমান্তের চরখিদিরপুর ও খানপুরের বেশির ভাগ অংশ ডুবে গেছে। পদ্মার মাঝখানে অবস্থিত মিডল চরও পুরোপুরি ডুবে গেছে। এসব এলাকার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে গবাদিপশু নিয়ে রাজশাহী শহরের বাঁধের ধারে আশ্রয় নিয়েছেন।
রাজশাহীতে পদ্মাপাড়ের জনপ্রিয় বিনোদন স্থান ‘টি-বাঁধ’ এলাকায় পানি বিপৎসীমায় পৌঁছানোয় পানি উন্নয়ন বোর্ড গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। দোকানপাট সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তবে আজ সকাল ৯টার দিকে অনেকেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওই এলাকায় প্রবেশ করেছেন। তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে দেয়ালের পাশ দিয়ে গিয়ে পদ্মার পাড়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, ভারতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে এবং ফারাক্কার বেশির ভাগ কপাট খোলা থাকায় পদ্মার পানি বেড়েছে। জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য ‘টি-বাঁধ’ এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও টুরিস্ট পুলিশ। অনেকেই দেয়ালের পাশ দিয়ে ঢুকছে, যা আরও কড়াকড়ি করা হবে।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: