প্রকাশিত:
১ আগষ্ট ২০২৫, ১২:০৮
২০২৪ সালের ১ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজত থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে মুক্তি দেওয়া হয়। ছয় দিন আটক থাকার পর তাদের ডিবি কার্যালয় থেকে গাড়িতে করে নিজ নিজ বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। মুক্তি পাওয়া ছয়জনের মধ্যে তিনজন ছয় দিন, দুজন পাঁচ দিন এবং একজন চার দিন ডিবি হেফাজতে ছিলেন।
মুক্তির পর আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বার্তায় লেখেন, ‘ছয়জনকে ছয় দিন আটকে রাখা যায়, কিন্তু বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে আটকে রাখা যাবে না। যত দিন গণগ্রেফতার, জুলুম-নির্যাতন চলবে, তত দিন আন্দোলন চলবে।’
একই দিনে সকাল ১১টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে শিল্পীদের মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষিত থাকলেও পুলিশি বাধার মুখে তারা খামারবাড়ি মোড়ে আটকে যান। পরে ফার্মগেট সেজান পয়েন্ট এলাকায় বৃষ্টিতে ভিজেই রাজপথে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন শিল্পীরা।
এইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দল দুটি সাম্প্রতিক সহিংসতায় সরাসরি জড়িত এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ সরকারের হাতে রয়েছে। ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ১৮(১) ধারা অনুযায়ী এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এছাড়া, জাতিসংঘ সহিংসতা তদন্তে বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং’ দল পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে তারা সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
১ আগস্ট (৩২ জুলাই) বৃহস্পতিবার সারাদেশে পালিত হয় ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
একই কর্মসূচি পালন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীলদল সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীদের দাবির ‘কাঙ্ক্ষিত সমাধান’ হয়ে যাওয়ার দাবি করে আন্দোলন পরিহারের আহ্বান জানায়।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থী হত্যার বিচার, নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু শিক্ষা পরিবেশের দাবি জানান।
১ আগস্ট সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ২ আগস্ট (৩৩ জুলাই) ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, শহীদ, আহত, পঙ্গু ও গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের স্মরণে জুমার নামাজ শেষে কবর জিয়ারত, উপাসনালয়ে প্রার্থনা ও রাজপথে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
সর্বস্তরের জনগণ, বিশেষ করে শ্রমিক, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, আলেম-ওলামা ও প্রবাসীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
এইদিন ডিবি হেফাজত থেকে মুক্ত ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ ইসলামের বাবা বদরুল ইসলাম জানান, ভোর ৬টায় তাদের ডাকা হয় এবং দুপুরে নিজস্ব পরিবহনে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘তারা ডিবি অফিসে দুই দিন অনশন করেছে, এখন তারা শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল।’
এদিন বিকেলে কক্সবাজারে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার সম্মিলিত উদ্যোগে জুলাই আন্দোলনে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল সড়ক-মহাসড়ক। দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতের হত্যার বিচারসহ ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে মাঠে নামে তারা। এসময় অভিভাবকরাও আন্দোলনে নামে।
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা শিক্ষার্থী হত্যার বিচার ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। তারা রেমিট্যান্স বন্ধের আহ্বান জানান।
এই প্রেক্ষাপটে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং বর্তমান সরকারের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করে।
১৬ জুলাই কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, প্রাণহানি ও সহিংসতার ঘটনায় হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে তদন্ত কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
আন্দোলনকারীদের ভাষায়, ‘জুলাই গণহত্যা’র বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা দিন গণনায় পরিবর্তন এনেছেন। ১ আগস্টকে ‘৩২ জুলাই’ হিসেবে পালন করে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
ডেস্ক/আ.আ
মন্তব্য করুন: