প্রকাশিত:
২ আগষ্ট ২০২৫, ১২:২৪
আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় যখন সকল রসালো মিষ্টি আমের মৌসুম শেষের পথে তখন বাজারে দেখা মিলে গৌড়মতি নামের নাবি জাতের আমের। আমের মৌসুমের শেষে বাজারে পাওয়া যায় এবং নাবি জাতের আম হওয়ায় বাজার মূল্য ভালো পাচ্ছেন চাষীরা। প্রতিমণ আম বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায়। তবে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে এই আমের দাম আরোও বৃদ্ধি পায়। আর এই আম চাষে নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষীরা এবং গৌড়মতি আমের চাষাবাদ বৃদ্ধিতে কাজ করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র থেকে জানা যায়, গৌড়মতি প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভাবিত একটি নতুন জাত, যা ২০১২ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রথম পাওয়া যায়। প্রাচীন সভ্যতার অংশ হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা একসময় গৌড় বাংলার অংশ ছিলো, সেই হিসেবেই ২০১৩ সালে তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মঞ্জুরুল হক প্রথম এই আমটির নামটি দিয়েছিলেন গৌড়মতি। পরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি-১২ নামে গৌড়মতিকে অবমুক্ত করেন। এছাড়া আশ্বিনা ও ল্যাংড়া এ দুই জাতের আমের মুকুলের প্রাকৃতিক পরাগায়নের মাধ্যমে নতুন জাতটির উৎপত্তি হয়েছে বলে কৃষিবিদদের ধারণা। নাবি জাতের হলেও মুকুল অন্যান্য জাতের মতো একই সময়ে আসে। এই আমটি ল্যাংড়া বা ক্ষিরসাপাত চেয়ে ১৭- ২০ % বেশি মিষ্টি। গৌড়মতির ভক্ষণযোগ্য অংশ প্রায় ৯৩ ভাগ সেখানে অন্যান্য ভালো জাতের আমের ভক্ষণযোগ্য অংশ ৮০-৮২ ভাগ। আমটি পাকলে হলুদাভার সঙ্গে সিঁদুরে রঙের মিশ্রণে অসাধারণ দেখায়। তাছাড়া এক বিঘা জমিতে প্রায় ২০০ মতো গাছ রোপন করা সম্ভব এবং গাছ রোপনের দুই বছর থেকেই আম পাওয়া যায়। জীবনচক্র অনুযায়ী এই আম বাজারে থাকবে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এবং পাকা শুরু হয় জুলাই মাসে।
অপরদিকে চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গৌড়মতি আমের মিষ্টতা ও খ্যাতির কারণে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এর সুনাম। লেট ভ্যারাইটি (নাবি) বা নামলা জাতের গৌড়মতির বিপুল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। বর্তমানে উন্নত মানের গৌড়মতি এক মনের দাম ৭-৮ হাজার টাকা। অন্য মানেরগুলোর দাম ৫-৬ হাজার টাকা মন। গত কয়েক বছরে গৌড়মতি বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা মন দরে।
আম চাষী আহসান হাবিব জানান, গৌড়মতির রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এই আম পচনশীলতার দিক থেকেও অধিক সহনীয়। গৌড়মতি আম গাছ থেকে নামানোর ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। এছাড়া বিশেষ এই জাতের আমগাছের বৈশিষ্ট্য হলো, আম ধরার পর গাছের গোড়া বা কাণ্ড থেকে নতুন পাতা বের হয়। ফলে প্রতিবছরই গাছে ফল ধরে। গৌড়মতি গাছের ফল ধারণ সক্ষমতাও বেশি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, গৌড়মতি আম গুটি ও নাবি জাতের আম। আমটি গুটি জাতের হলেও মিষ্টতা বেশি আছে। তবে বেশি বৃষ্টি হলে আম ফেটে যায়। এজন্য ব্যাগিং করা লাগে এবং বেশি বেশি স্প্রে করা লাগে। এতে অনান্য আম চাষের চেয়ে ১০ ভাগ বেশি খরচ হয়। এছাড়া মৌসুমের শেষের দিকে বাজারে আসে বলে দাম বেশি পাওয়া যায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো: ইয়াসিন আলী জানান, দিন দিন গৌড়মতি আম চাষে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এটি নাবি জাতের আম এবং মৌসুমের শেষে পাওয়া যায়। এতে চাষীরা বাজার মূল্য ভালো পায়। এই আমটির মিষ্টতা বেশি ও আঁশ পাতলা হওয়ার কারনে ভোক্তাদের কাছে জনপ্রিয়তা আছে। এই বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ২৩৪ হেক্টর জমিতে এই আমের চাষ হচ্ছে। এছাড়া আমটির চাষাবাদ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার টন।
এম.এ.এ/আ.আ
মন্তব্য করুন: