চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ থেকে ফেরার পথে একজন বিএনপির কর্মী ও প্রবাসী যুবকের উপর হামলা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে ও চরাঞ্চলের কিশোর গ্যাং নেতা মো. রিশানের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুল হাই।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগষ্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল মাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল ইসলামের আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
গ্রেপ্তার রিশান ইসলামপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমানের ছেলে।
পুলিশ সূত্র থেকে জানা যায়, গতকাল বুধবার রাতে শহরের পুরাতন বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং লিডার মো. রিশানকে গ্রেপ্তার করে সদর মডেল থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার মো. রিশানের বিরুদ্ধে ককটেলবাজি, লুটপাট ও হত্যাচেষ্টাসহ সদর থানায় ৪টি মামলা রয়েছে । পরে আজকে (বৃহস্পতিবার) চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আমলি কোর্টে পাঠানো হয় এবং বিস্তর জিঞ্জাসাবাদ করার জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।
এলাকাবাসীর সূত্র থেকে জানা যায়, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গ্রেপ্তারকৃত রিশান ও তার পিতা জিয়াউর রহমান ক্যাডার বাহিনী তৈরি করে মহানন্দা নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন, ইউনিয়নের মাদকের বেচাকেনা নিয়ন্ত্রণ ও অসহায় এলাকাবাসীকে বিচার শালিসের নামে জিম্মি করে অর্থ আত্মসাৎ করতেন। এছাড়া এলাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পলাতক আব্দুল ওদুদ বিশ্বাসের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে দিনে দুপুরে রাহাজানি ও অসহায় মানুষকে অত্যাচার নির্যাতনও করতেন। ০৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পরও এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে যান রিশান ও তার পিতা জিয়াউর রহমান এবং অবৈধ বালু উত্তোলনসহ এলাকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্থানীয় বিএনপির নেতাদের সাথে মাঝে মধ্যেই সংঘর্ষ লোগে থাকে তাদের। তার ধারাবাহিকতায় গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মীরের খৈলান এলাকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনুর রশীদের সমাবেশে যান প্রবাসী যুবক ও বিএনপির কর্মী ইসরাইল হক কিনু। ফেরার পথে আওয়ামী লীগ নেতা জিয়া মেম্বারের নির্দেশে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে কিনুর ওপর হামলা কারা হয় এবং তার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে রক্তাত্ব জখম করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই আব্দুল হাই জানান, গোপন তথ্যে বুধবার রাতে শহরের পুরাতন বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. রিশানকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনের একটি মামলায় তাকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানী শেষে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
প্রসঙ্গত, বিএনপির কর্মী ইসরাইল হক কিনুর উপর হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাতে আহতের ভাই মো. তুফানী বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতাসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনে এ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমানকে। অন্য আসামিরা হলেন- জিয়া মেম্বারের ছেলে লিডার মো. রিশান, গোলাব আলী, মো. দুরুল, মো. জেনারুল, মো. বাশির, সুমন আলী, মো. আমিন, কুরবান আলী, আনারুল ইসলাম, মো. মিজান, মো. মেহেদী, মো. মাইনুল ও মো. রিহাজ। আসামিরা সবাই আওয়ামী লীগ নেতা জিয়া গ্রুপের লোক হিসেবে পরিচিত।
এম.এ.এ/আ.আ
মন্তব্য করুন: