চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাহ্ নেয়ামতুল্লাহ কলেজের লীজপ্রাপ্ত জমির উপর দিয়ে ৩০০ ফুট প্রশস্ত সড়ক নির্মাণের প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটিকে দ্বিখণ্ডিত করে রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ বন্ধ এবং গণশুনানি বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
রবিবার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এক ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন অত্র কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম।
এসময় বক্তব্য রাখেন সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুল হাসান ডন, প্রভাষক নওসাবাহ নওরীন নেহা, মুহাম্মদ ফারহাত হোসাইন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কলেজ শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফিরোজ কবির, ছাত্র আন্দোলনের নেতা মো. আব্দুর রাহিম, কলেজ শিক্ষার্থী আবু বক্কর, নওয়াব শরীফ মারুফ, উৎস আসেফসহ আরও অনেকে।
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপিতে রাস্তা নির্মাণের জন্য কলেজের লীজপ্রাপ্ত জমি অধিগ্রহণ এবং ঘোষিত গণশুনানি (৪ আগস্ট ২০২৫) বাতিলের দাবি জানানো হয়।
১৯৭৯ সালের ১৩ জুলাই প্রতিষ্ঠিত শাহ নেয়ামতুল্লাহ কলেজ দীর্ঘ চার দশক ধরে এ অঞ্চলের শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের অনুমোদনে মহারাজপুর ও হুজরাপুর মৌজায় মোট ৫.৫০৪৯ একর জমি কলেজের নামে ৩০ বছরের জন্য লীজ দেয়া হয়, যা পরবর্তীতে নবায়নের শর্তে আরও দুই দফা (৩০+৩০ বছর) নবায়নের অধিকার কলেজ কর্তৃপক্ষের রয়েছে।
বর্তমানে কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক (পাস) ও ৬টি অনার্স কোর্সসহ বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে। প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত এ প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান ভবন, আইসিটি ভবন, অডিটোরিয়াম, হোস্টেল, মসজিদসহ আধুনিক অবকাঠামো গড়ে উঠেছে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বরোড সংলগ্ন কলেজের উত্তর পাশ দিয়ে বেলেপুকুরমুখী সংযোগ সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা সরাসরি কলেজের লীজপ্রাপ্ত জমির মধ্য দিয়ে যাবে।
এতে কলেজের মূল একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনসমূহ, আইসিটি ভবন, অডিটোরিয়াম ও হোস্টেলসহ অবকাঠামোগত কাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০১২ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক কে এম আলী আজম সরেজমিন পরিদর্শন করে ঘোষণা দেন, কলেজকে দ্বিখণ্ডিত করে রাস্তা নির্মাণ করা হবে না। এরপরও অল্প কয়েকজন ব্যক্তি বিশেষ স্বার্থে এলাকাবাসীর নাম ব্যবহার করে প্রকল্পটি পুনরায় বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়।
স্থানীয় শিক্ষানুরাগী মহল মনে করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে উন্নয়নের নামে এ ধরনের পরিকল্পনা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অশনিসংকেত বয়ে আনবে। এ বিষয়ে স্মারক লিপি পাওয়ার পরে ৪/৮ /২০২৫ ইং তারিখের গণ শুনানি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সামাদ।
রাব্বি হোসেন/ই.ই
মন্তব্য করুন: