প্রকাশিত:
৯ জুলাই ২০২৫, ১৮:১৭
“আপনারা খুব ভালো করে জানেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নির্যাতন-হত্যা-গুম-খুনের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী আমাদের দল বিএনপি,” বলেন তিনি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এককভাবে হাজার হাজার মানুষের হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী’ করার পাশাপাশি তার দল আওয়ামী লীগেরও বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার সকালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসনের দুই উপদেষ্টাকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা সবসময়ে মনে করি যেসমস্ত রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদের পক্ষে থাকবে, যারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে কাজ করবে… বিশেষ করে আওয়ামী লীগ কাজ করেছে তাদের প্রতিটি ব্যক্তির শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত এবং শাস্তি হওয়া উচিত।
“বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা, তিনি এককভাবে, আমি মনে করি হাজার হাজার মানুষ হত্যার জন্য দায়ী। তার বিচার শুরু হয়েছে। আমরা আশাবাদী তার এবং তার সঙ্গে যারা গণহত্যা এবং এই ফ্যাসিস্ট আক্রমণের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেকেরেই বিচার হবে।”
তিনি বলেন, “সেই হিসেবে দল যদি আইনের আওতায় নিয়ে এসে, দলও যদি দেখা যায়, দলগত হিসেবে তাদের বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।”
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটে। আন্দোলনের সময় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
ইতোমধ্যে তার দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া দলটিকে জুলাই আন্দোলন দমনে ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করতে মে মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। দলটির নিবন্ধনও বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।
এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে চিকিৎধীন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসকে দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব। তিনি চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন।
আব্দুল কুদ্দুস স্নায়ুবিক সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এরপর একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদকে দেখতে যান মির্জা ফখরুল। তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন তিনি।
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএনপি মহাসচিব।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে যখন দেশের মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে তখন একটি মহল বিরোধিতা করে নানা ধরণের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে, এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি এই কথাগুলোর উত্তর কতবার দিয়েছি। দুইদিন আগেও আমরা সংবাদ সম্মেলন করেছি। একটা কথা বলতে চাই, গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি যদি কেউ থাকে সেটা হচ্ছে বিএনপি এবং সবচেয়ে বেশি লড়াই যদি করে গণতন্ত্রের জন্য সেটা বিএনপি। বাংলাদেশকে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বিএনপি নিয়ে এসেছে বহুদলীয় গণতন্ত্রে এবং পরবর্তীকালে সংসদীয় গণতন্ত্রে।
“সুতরাং এই বিষয়ে প্রশ্ন করার কোনো প্রয়োজন নেই। একটি জিনিস কী, দেশটাকে সকলে মিলে বাঁচাতে হবে। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হচ্ছে দেশকে সঠিক পথে উঠানো এবং যত দ্রুত সেটাকে উঠানো যাবে ততই মঙ্গল।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “যারা মনে করে যে, নির্বাচন প্রয়োজন নেই আমার মনে হয়, তারা আবার চিন্তা করবেন। নির্বাচন প্রয়োজন জনগণের, জনগণের জন্য।”
“একটা নির্বাচিত সরকার দরকার, যে সরকারের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক থাকবে।”
সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, “প্রত্যেকটি সংস্কারের দাবি আমরাই তুলেছি। সুতরাং সংস্কার এবং নির্বাচন এর মধ্যে কোনো সাংঘর্ষিকতা নেই… দুইটা একসাথে চলবে।”
‘ফ্যাসিস্ট আমলের বড় ভুক্তভোগী বিএনপি’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আপনারা খুব ভালো করে জানেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নির্যাতন-হত্যা-গুম-খুনের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী আমাদের দল বিএনপি। আমি নিজেও ১১২টা মামলার আসামি এবং ১৩ বার জেলে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে।”
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: