প্রকাশিত:
১৭ জুলাই ২০২৫, ১৯:৫৬
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আমরা জুলাই ছাত্র অভ্যুত্থান সংগঠিত করেছিলাম ডেমোক্রেসির জন্য। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, সারাদেশে মবক্রেসির রাজত্ব হচ্ছে। চেয়েছিলাম ডেমোক্রেসি হয়ে যাচ্ছে মবক্রেসি। কিন্তু কেন?
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে এক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করে যুবদল।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যারা গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করছে, তারা সাহস পাচ্ছে কোথায়? তারা কারা। এর জবাব হচ্ছে, সরকারের নির্লিপ্ততা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের ব্যর্থতা।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে আমরা সবসময় তাদের সফলতা কামনা করেছি। আমরা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সবসময় সহযোগিতা প্রদান করেছি। কিন্তু আজকে গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে ইস্যু সৃষ্টি করে, সেই ইস্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বিএনপিকে কলঙ্কিত করার একটি অপচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারা এগুলো করছে? কারা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসন চাচ্ছে।
‘যারা বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন চায়, তারা বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের শক্তিকে
চ্যালেঞ্জ করছে এবং বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে’ —দাবি করেন সালাহউদ্দিন।
প্রতিশ্রুত ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সরকার কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে? এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, লন্ডন বৈঠকের পর প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য নির্দেশনা দেবেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করছেন, প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে এখন অফিশিয়ালি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কোনো যথাযথ নির্দেশনা দেয় নাই।
‘জাতিকে আশ্বস্ত করে অতি শিগগিরই যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনকে বার্তা দেবে সরকার, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে সালাহউদ্দিন বলেন, ভবিষ্যতে নিরপেক্ষ সরকার অধীনে যেন নির্বাচন হবে তা পৃথিবীর মধ্যে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
তিনি আরও বলেন, এটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষতায় যেন একটি জ্বলন্ত প্রমাণ হয়। সারা পৃথিবীর কাছে প্রশংসিত হয়। এর স্বচ্ছতা নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে। সেজন্য আমরা বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে আপনাকে সহযোগিতা করবো। সহযোগিতা করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। এই জাতির কাছে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।
সরকারকে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন কায়দায় যারা ইস্যু সৃষ্টি করছে সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য, বিলম্বিত করার জন্য, তারা যেন আশ্রয়-প্রশ্রয় না পায়। জনগণের মনে কোনো প্রশ্নের উদ্বেগ না হয় যে, সরকার একটি নির্দিষ্ট দলকে বোধয় সুবিধা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি নাই, ফ্যাসিবাদী পতিত শক্তি গোপালগঞ্জ কিংবা অন্য কোথায়ও গণঅভ্যুত্থানের শক্তির ওপরে হামলা করার সাহস পাবে। জাতির অমৃত সাহসী সন্তানদের ওপরে ফ্যাসিবাদী পতিত শক্তি হামলা করার সুযোগ সাহস পায়, কিন্তু কী করে?
‘এই কেন—এর জবাবে হচ্ছে যারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল সংগঠিত করেছে। যাদের এখনও রেজিস্ট্রেশন নাই। তারা অনেক আবেগ তাড়িত হয়ে ও অপরিকল্পিতভাবে এমন কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে। সেই রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে যারা গণঅভ্যুত্থানের অগ্রসৈনিক তাদের ওপর ফ্যাসিবাদী শক্তি হামলা করছে।’
তিনি আরও বলেন, কর্মসূচির ধরন দেখছি, তাতে একটা বার্তা পাচ্ছি। কোনো না কোনো বাহানায় অবস্থা সৃষ্টি করা, যাতে করে বলতে পারে সরকার কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সরকার নির্বাচন কীভাবে দেবে?
‘নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়’ এনসিপির এমন বক্তব্যে প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, শাপলা প্রতীক না দিলে কি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা যায়? জাতীয় প্রতীকের মার্কা ছাড়া কি দেশে আর কোন মার্কা ছিল না? এই প্রশ্ন তো আমরাও করতে পারি। অনেকে বলছে, ধানের শীষও জাতীয় প্রতীক। কিন্তু ধানের শীষের মার্কাটা যেভাবে আছে, সেটা নির্বাচন কমিশনের তফসিলে আছে। তফসিলে ৭৮ সালের আগে সেই মার্কা ওখানে বিদ্যমান ছিল। সেই মার্কা নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ প্রশ্ন তুলে নাই।
‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে কোনভাবেই যেন ফ্যাসিবাদী শক্তি ফাটল ধরাতে না পারে তার জন্য সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে সালাহউদ্দিন আরও বলেন, যদি ফ্যাসীবাদী শক্তি ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির সুযোগ পায়, তাহলে তো পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি আবার জয়ী হবে। এদেশের জনগণ শেখ হাসিনার চেহারা আর কোনো দিন দেখতে চায় না।
শপথ নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জাতির জীবনে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য গঠিত হয়েছে। এই ঐক্যকে আমরা সমুন্নত রাখি, সবসময় অটুট রাখি, ইস্পাত কঠিন বন্ধনে আবদ্ধ রাখি।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: