[email protected] ঢাকা | রবিবার, ৩রা আগস্ট ২০২৫, ১৯শে শ্রাবণ ১৪৩২
thecitybank.com

প্রবাসী ভোটাধিকার বিষয়ে এনসিপির সংবাদ সম্মেলন

রাজনৈতিক ঐক্য না হওয়ার অজুহাতে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন শুরু করা হয়নি

চাঁপাই জার্নাল ডেস্ক:

প্রকাশিত:
২৭ জুলাই ২০২৫, ১৮:৪০

ছবি: সংগ্রহীত

রাজনৈতিক ঐক্য না হওয়ার অজুহাতে এখনো প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন শুরু করা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির- এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্সের কো-অর্ডিনেটর তারিক আদনান মুন।

রোববার (২৭ জুলাই) এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রবাসী ভোটাধিকার বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি লিখিত বক্তব্যে এই অভিযোগ তোলেন।

লিখিত বক্তব্যে তারিক আদনান মুন বলেন, আমি আজ কথা বলছি সেই দেড় কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির পক্ষ থেকে, যারা বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে, যাদের শ্রম, মেধা আর ভালোবাসায় বাংলাদেশ এখনো সচল। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রবাসী ভোটাধিকার নিয়ে উদ্যোগ নেওয়াকে আমরা স্বাগত জানাই। এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, পোস্টাল ব্যালট বা অনলাইন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এখনো কোনো স্পষ্ট রোডম্যাপ, সময়সীমা বা গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়নি। শুধু কয়েকটি দেশে সীমিত পাইলট প্রকল্প চালু করার কথা বলা হচ্ছে। আর রাজনৈতিক ঐক্য না হওয়ার অজুহাতে এখনো প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন শুরু করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আজ আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে চাই— জুলাই বিপ্লবসহ বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রবাসীরা সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রেখেছে। আমাদের পাঠানো প্রতি মাসের ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স কেবল দেশের পরিবারকে নয়, দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, অবকাঠামো, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং গ্রামীণ জীবনযাত্রাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তবুও আজ আমরা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত।

‘নির্বাচনের জন্য এখনো পর্যাপ্ত সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে শুধু সীমিত পাইলট প্রকল্প চালু করার ঘোষণা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন কমিশনের এখনই সাহসী ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়।’

তারিক আদনান মুন বলেন, আমরা আজ এখানে শুধু দাবি নিয়ে আসিনি, আমরা প্রশ্নও নিয়ে এসেছি। আমারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীদের সাথে অনলাইন ও অফলাইন আলোচনা সভার আয়োজনের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন সংগ্রহ করেছি, কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে আমরা সবগুলো প্রশ্ন এখন পড়ছি না, তবে আপনাদের মাধ্যমে আমরা এই প্রশ্নগুলো নির্বাচন কমিশনের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।

এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে তিনি তিনটি স্পষ্ট দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো

প্রথমত, প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে হবে এবং এই প্রক্রিয়ার একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ১৪ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে ঘোষণা করতে হবে। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, যারা নতুন ভোটার, তাদের বিদেশে অবস্থানের তথ্য হালনাগাদ করার সুযোগ দিতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ - অথচ প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন না হলে ভোট আয়োজন সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়বে। আমাদের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে এখনো নিবন্ধন শুরুর কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে প্রবাসীরা অনেক ধোঁয়াশার মধ্যে আছেন।

দ্বিতীয়ত, পোস্টাল ব্যালটে বা অনলাইনে প্রদত্ত ভোট যেন সময়মতো এবং স্বচ্ছতার সাথে গণনায় অন্তর্ভুক্ত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
কীভাবে এই ব্যালটগুলো যাচাই হবে, কোথায় পাঠাতে হবে তা স্পষ্টভাবে বলা জরুরি। বিশেষ করে জানতে চাই—
● ভোট গণনার জন্য পোস্টাল ব্যালটগুলো কীভাবে যাচাই বা অনুমোদন করা হবে?
● এগুলো পাঠাতে হবে কোথায় উদাহরণস্বরূপ- নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়, সংশ্লিষ্ট দূতাবাস, বা অন্য কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানায় ?
● ব্যালট পৌঁছানোর সময়সীমা ও গৃহীত ব্যালট গণনায় অন্তর্ভুক্ত করার নিয়ম কীভাবে নির্ধারিত হবে?
● প্রক্রিয়াটি যেন স্বচ্ছ হয় এবং কোনো ভোট যেন বাদ না পড়ে – তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন কী ধরনের মনিটরিং বা ট্র্যাকিং ব্যবস্থা গ্রহণ করবে?

তৃতীয়ত, প্রবাসীদের ভোটাধিকার কার্যকর করার জন্য একটি স্থায়ী উচ্চপর্যায়ের কারিগরি কমিটি গঠন করতে হবে, যা ২০২৬ পরবর্তী নির্বাচনগুলো নিয়েও দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করবে। এই কমিটিতে প্রযুক্তিবিদ, আইনজ্ঞ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও প্রবাসী প্রতিনিধিদের যুক্ত করতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে কাজ করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি– ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স পরবর্তী কর্মসূচি

২৭ জুলাই থেকে ১৩ আগস্ট- আমার ভোট আমি দেব, প্রবাস থেকেও অংশ নেব-- সর্বাত্মক অনলাইন ক্যাম্পেইন, প্রবাসী গণজমায়েত ও নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রবাসীর চিঠি প্রেরণ। ১৪ আগস্টের মধ্যে রোডম্যাপ ও গাইডলাইন প্রকাশিত না হলে ১৫, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গ্লোবাল প্রটেস্ট- ডায়াস্পোরা রাইজিং ফর ভায়োলেটিং রাইটস।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব সাইফ মোস্তাফিজ, যুগ্ম সদস্য সচিব ফারহাদ আলম ভূঁইয়া, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মাহাবুব আলম ও এনসিপি যুবশক্তির আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম।

এছাড়াও অনলাইনে যুক্ত ছিলেন- এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্সের কো- অর্ডিনেটর (পলিসি উইং) দিলশানা পারুলসহ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

ডেস্ক/ই.ই


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর