প্রকাশিত:
২৯ জুলাই ২০২৫, ১৮:৩৮
জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘রংপুরে যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। যিনি ধর্ম অবমাননা করেছেন, তাঁকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা ধর্মীয় সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই, ইনসাফের বাংলাদেশ গড়তে চাই, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইলে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা উপলক্ষে আয়োজিত পথসভায় নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন।
শহরের নিরালা মোড়ে আয়োজিত পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘রংপুরের গঙ্গাচড়ায় আমাদের হিন্দু জনগোষ্ঠীর বাসভবনে বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে, লুটপাট চালানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের নবীজি (সা.)–কে সেখানে কটূক্তি করা হয়েছে। আমাদের নবীজি (সা.)–কে যে কটূক্তি করে, আমাদের ধর্মকে যে অবমাননা করে, আমরা অবশ্যই তার বিচার চাই। কিন্তু সেই বিচার হতে হবে আইনের আওতায়। আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যদি সেই সম্প্রদায়ের ওপর কেউ আঘাত হানে, সেই ঘটনাকে আমরা কখনোই মেনে নেব না। আমাদের ধর্ম এটাকে পারমিট করে না।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘নবীজি (সা.) সব সময় অন্য ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেন। ফলে এ ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য ধর্মীয় নয়, তাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক, তাদের উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক এবং তাদের উদ্দেশ্য লুটপাট করা।’ তিনি বলেন, ‘এ রাজনীতি শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ, সংখ্যালঘুদের জমি দখল এবং লুটপাটের রাজনীতি ও বিচার না করার রাজনীতি।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানীর মতো মহান রাজনীতিক পুরুষ, যাঁরা এ বাংলাদেশের স্থপতি, তাঁদের বাদ দিয়ে বাংলাদেশের জাতির পিতা শুধু এক ব্যক্তিকে ঘোষণা করা হয়েছে। এক ব্যক্তিকে পূজা করা হয়েছে গত ৫৪ বছর ধরে। কিন্তু মাওলানা ভাসানী না থাকলে শেখ মুজিব সৃষ্টি হতে পারতেন না। যে ’৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব নিয়েছে, সেই অভ্যুত্থানের অন্যতম কারিগর নেপথ্যের পুরুষ ছিলেন মাওলানা ভাসানী। তিনি কৃষক–শ্রমিকের জন্য লড়াই করেছেন, গণমানুষের জন্য লড়াই করেছেন। আমরা মাওলানা ভাসানীর সেই আদর্শকে ধারণ করে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘মাওলানা ভাসানী শুধু রাজনীতিবিদ ছিলেন না, ছিলেন রাজনৈতিক দার্শনিক। আমরা ভাসানীকে বাংলাদেশের অন্যতম ফাউন্ডিং ফাদার মনে করি। বাংলাদেশে কোনো একজন জাতির পিতা নয়, বাংলাদেশে অনেকজন জাতির পিতা রয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম মাওলানা ভাসানী।’
সমাবেশে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কারী সারজিস আলম বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে ফ্যাসিবাদের পছন্দের কিছু জেলা বাদ দিয়ে, বাকি জেলাগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল তাদের স্বকীয়তায় বাংলাদেশের জনগণের কাছে এবং বহির্বিশ্বে যতটা গুরুত্বের জায়গায় থাকতে পারত, কিন্তু কিছু ব্যক্তিস্বার্থের মানুষ তাঁদের ব্যক্তিগত এবং দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এত বড় একটি ঐতিহ্যবাহী জেলার স্বার্থকে প্রতিনিয়ত বিসর্জন দিয়ে এসেছে।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে আরেকটা কথা বলি, আমরা মিডিয়াকে কোনো ব্যক্তিগোষ্ঠীর বা দলের দালাল হিসেবে দেখতে চাই না। এই মিডিয়া যেন কোনো ব্যক্তি বা দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য কাজে না লাগে। এই মিডিয়া যেন প্রোপাগান্ডা বাস্তবায়নের সেলের অংশ হিসেবে কাজ না করে।’ তিনি বলেন, “’২৪–পূর্ববর্তী সময়ে কয়েকটি মিডিয়া অন্ধভাবে দলের দালালি করেছে। তাদের সংবাদকর্মীরা আজ যে সেই চ্যানেলে কাজ করে, সেটা বলতেও লজ্জা পায়। আমরা চাই না ’২৪–পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো মিডিয়ার আর এই করুণ দশা হোক।’
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক নাহিদা সারওয়ার, জ্যেষ্ঠ সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সাইফুল্লাহ হায়দার, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) অলীক মৃ, সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) আজাদ খান ভাসানী, কেন্দ্রীয় সদস্য মেজর (অব.) সালাহউদ্দিন, জেলার প্রধান সমন্বয়কারী মাসুদুর রহমান প্রমুখ। সমাবেশে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত আবদুল্লাহ উপস্থিত থাকলেও অসুস্থতার কারণে বক্তব্য দেননি।
পদযাত্রার আগে সকালে শহরের একটি হোটেলে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা জুলাই আন্দোলনে টাঙ্গাইলের শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এনসিপির এই পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহরে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সোমবার রাতে এনসিপির নেতারা টাঙ্গাইলে পৌঁছানোর পর সন্তোষে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর কবর জিয়ারত করেন।
দুপুর ১২টার দিকে এনসিপি নেতারা শহরের শামসুল হক তোরণের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। এতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।
শহরের কেন্দ্রস্থল নিরালা মোড়ে এনসিপির সমাবেশের কারণে সকাল থেকেই ভিক্টোরিয়া সড়ক, কবি নজরুল সরণি ও মেইন রোডের কিছু অংশে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে শহরের অন্যান্য সড়কেও যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয় শহরবাসীকে।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: