জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। বাংলামোটর, ঢাকা, ২ আগস্ট
জুলাইয়ের নামে কেউ যদি অপকর্ম করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি, বৈষম্যবিরোধী বা জুলাইয়ের নাম বিক্রি করে, ব্যবহার করে কেউ যদি অসাধু কাজ ও অপকর্মের চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দলীয়ভাবেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন তাঁরা। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি ব্যবস্থা নেয় আশা করা যায়, এটা আর হবে না। যারা অসাধু কাজ করছে, তাদের কঠোরতম বিচার হওয়া উচিত। শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে এনসিপি। সেখানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নাহিদ ইসলাম।
জুলাইয়ের (জুলাই গণ-অভ্যুত্থান) নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলামকে প্রশ্ন করা হয়। এর জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘শুধু বৈষম্যবিরোধী নয়, রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন জায়গায় নেতা-কর্মীরাও যে পরিমাণ চাঁদাবাজিতে যুক্ত হয়েছে, সেটাতেও কঠোর হতে হবে। সর্বোপরি বাংলাদেশ থেকে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দুর্নীতির বিলোপ ঘটাতে হবে। এটাই কিন্তু আমাদের সকলেরই আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা।’
জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে প্রাপ্তি কী, এমন এক প্রশ্নে নাহিদ বলেন, অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেই আকাঙ্ক্ষার পূর্ণতা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক দল সবারই দায়িত্ব ছিল। যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারের কাছেই সব ক্ষমতা, তাদের বেশি দায়িত্ব ছিল। জুলাই সনদের মাধ্যমে হয়তো এর আংশিক প্রাপ্তি পাওয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, ৩ আগস্ট (২০২৪ সাল) একটা ঐতিহাসিক দিন। সেদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এক দফা (আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ) ঘোষণা করা হয়েছিল। তাই ৩ আগস্ট (রোববার) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করতে হচ্ছে। তবে চেষ্টা থাকবে যাতে মানুষের ভোগান্তি কম হয়। এই কর্মসূচির মাধ্যমে এনসিপির ভবিষ্যৎ রূপরেখা হাজির করা হবে।
নাহিদ বলেন, এনসিপির অনুরোধে ছাত্রদল শহীদ মিনার থেকে তাদের কর্মসূচি (৩ আগস্ট) সরিয়ে শাহবাগে এনেছে। এ জন্য ছাত্রদলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান তিনি।
যেহেতু একই এলাকায় বড় দুটি কর্মসূচি থাকবে, পাশাপাশি এইসএসসি পরীক্ষাও হবে, তাই ঢাকা শহরে যানজটে ভোগান্তি হবে বলে আগাম দুঃখ প্রকাশ করেন নাহিদ।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সব পক্ষ ও রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ের ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। এই উদ্যোগকে স্বাগত। পাশাপাশি দাবি ছিল ৫ আগস্টের মধ্যেই যাতে জুলাই সনদের সুরাহা হয়। জুলাই সনদের বিষয়ে বেশির ভাগ জায়গায় ঐকমত্য হয়েছে। কিছু জায়গায় দ্বিমত রয়েছে। যে বিষয়গুলোতে আপত্তি রয়েছে, সেগুলো নিয়ে কমিশনের পরিকল্পনা কী, তা এখনো জানানো হয়নি।
নাহিদ বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, কিন্তু কমিশন কিছু বলেনি। বাস্তবায়ন পদ্ধতির সুরাহা করেই সব দল স্বাক্ষর করবে। তিনিড় আরও বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। জুলাই সনদের ভিত্তিতেই পরবর্তী নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচিত সংসদের হাতে সংস্কার কার্যক্রম ছেড়ে দেওয়া যাবে না। বরং জুলাই সনদের ভিত্তিতেই আগামীর সংসদ বা গণপরিষদ গঠিত হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময় থেকেই জুলাই সনদ কার্যকর করতে হবে উল্লেখ করে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকার যাতে ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদের সুরাহা করে। এটা গণ-অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সবার দাবি, যাতে এক বছরের মধ্যে সব পক্ষ একসঙ্গে উদ্যাপন করতে পারে।
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, যে ঘোষণাপত্র তাঁরা আকাঙ্ক্ষা করেন, এর একটা খসড়া অনেক আগেই অন্তর্বর্তী সরকারকে দেওয়া হয়েছে। সরকার বলেছে, তারা দায়িত্ব নিয়ে এটি ঘোষণা করবে। আনুষ্ঠানিক সভাও হয়েছে কয়েকটি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও তাদের খসড়া দিয়েছে। সব কটি সমন্বয় করে হয়তো ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি, ঘোষণাপত্রের অবশ্যই সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে। সংবিধানের প্রিঅ্যাম্বল (প্রস্তাবনা) ও তফসিলে এই জুলাই গণ–অভ্যুত্থান বা ঘোষণাপত্রের কথাটি উল্লেখ থাকতে হবে। এবং আমরা আশা করছি, সরকারের জায়গা থেকে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। সকল রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে সেটা সমর্থন দেবে এবং কমিটমেন্ট (অঙ্গীকার) দেবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারোয়ার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, যুগ্ম সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল-আমিন, এস এম সাইফ মোস্তাফিজ ও মো. নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: