‘৫ ই আগস্ট আমাদের সবার কাছে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে আমানত স্বরুপ’ বলে মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আমৃত্যু সেই পরম আমানতের খেয়ানত না করার প্রতিজ্ঞাই আমাদেরকে কাঙ্খিত বাংলাদেশ এনে দিতে পারে। ইনশাআল্লাহ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেটা করবো।’
মঙ্গলবার (০৫ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এসব কথা বলেন তিনি।
‘৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে ৫ আগস্ট ২০২৫’ শিরোনামে দেয়া সেই পোস্টে সারজিস লিখেছেন, ‘স্বৈরাচারী খুনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আপামর ছাত্র জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থান! লুকিয়ে দেশ ছেড়ে পালালো শেখ হাসিনা। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্যাতিত হয়ে আসা মানুষগুলো স্বপ্ন দেখতে লাগলো কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশের।’
তিনি লিখেছেন, ‘১ বছর অতিক্রম শেষে আমরা এখনো আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পাইনি। হয়তো ১ বছরে পাওয়া সম্ভবও নয়। কিন্তু ১ বছরে যতটুকু পাওয়া সম্ভব ছিল ততটুকুও আমরা পাইনি। এক্ষেত্রে কারো দায় হয়তো কম, কারো হয়তো বেশি। কিন্তু এককভাবে কাউকে দায়ী করার সুযোগ নেই। একটা কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রের জন্য রাষ্ট্রীয় বিদ্যমান গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর একই সাথে এগিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র বিনির্মাণে এই প্রত্যেকটি অংশ একে অপরের পরিপূরক। রাজনীতিবিদ, আমলাতন্ত্র, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিভিল সোসাইটি, মিডিয়া, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ বলতে আমরা যাদেরকে বুঝাই, তাদের প্রত্যেকের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে একটা অংশ সহযোগিতা না করলে অপর অংশগুলোর উপরে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। সফলতা সম্ভব হয় না। অনেকটা চক্রের মত।
এনসিপির এই নেতা আরও লিখেছেন, ‘ব্যক্তি হাসিনা পালিয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে যে অসুস্থ এবং অপকর্মের চর্চাগুলো ক্ষমতায় থেকে তিনি ও তার বন্দোবস্ত অধিকাংশ মানুষের মননে, মগজে, চিন্তায়, অস্থিমজ্জায়, ভাবনায়, আচরণে সন্নিবেশিত করেছেন সেগুলো চাইলেই একটা ব্যক্তির মতো পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের প্রতিনিয়ত ফাইট করতে হবে এই নষ্ট সিস্টেম, চিন্তা আর ব্যক্তিদের সঙ্গে। সুযোগ পেলে- যে রিকশাচালক ভাড়া বাড়িয়ে দেয়, যে সবজি বিক্রেতা সবজির দাম বাড়িয়ে দেয়, যে ব্যবসায়ী অসৎ উদ্দেশ্যে পণ্য মজুত করে রাখে, যে সাধারণ জনগণ ব্যক্তি স্বার্থে অর্থের বিনিময়ে হলেও সুপারিশ প্রত্যাশা করে, যে রাজনীতিবিদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে, যে আমলা ক্ষমতার দালালি করে, যে সিভিল সোসাইটি স্বার্থের কাছে অন্ধ হয়ে যায়, যে মিডিয়া ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য সার্ভ করে, যে রাজনৈতিক দল দেশের আগে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়; তাদের কারো মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। যার যতটুকু সামর্থ্য সে ততটুকু ক্ষমতার অপব্যবহার করে। আমাদের লড়াইটা ইন্ডিভিজ্যুয়াল জায়গা থেকে। প্রত্যেককে প্রত্যেকের কাজটা করতে হবে।’
সারজিস লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি আমাদের লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারি, তাহলে কিছুটা বিলম্ব হলেও আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ অর্জন সম্ভব। যে প্রজন্ম একটা অভ্যুত্থান করে শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিস্টের পতন ঘটাতে পারে সেই প্রজন্মের সামনে আগামীতে অন্য কেউ যেকোনো কিছু করে অন্তত পার পেয়ে যাবে না। এই পথচলায় ষড়যন্ত্র হবে, ফাঁদ থাকবে, পিছুটান থাকবে, মিডিয়া প্রোপাগান্ডা করা হবে, মনোবল ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হবে কিন্তু দমে যাওয়ার সুযোগ নেই। করাপটেড সিস্টেমের ফলে সুবিধাভোগী যে অল্প কিছু কালো হাত আছে, তাদের কাছে রয়েছে অঢেল অবৈধ অর্থ। তারা সর্বোচ্চটা ব্যবহার করে আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করবে, বিশ্বাস ভাঙবে, একজনকে আরেকজনের প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতীয়মান করবে। আমাদেরকে এসব মোকাবেলা করেই দাঁতে দাঁত কামড়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের যেই সহযোদ্ধারা নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, যারা হাত-পা-চোখ হারিয়েছেন, শরীরে এখনো বুলেট নিয়ে ঘুরছেন, তাদেরকে সামনে রেখে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাদের এই ত্যাগ যেকোনো মূল্যে বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। ৫ ই আগস্ট আমাদের সবার কাছে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে আমানত স্বরুপ। আমৃত্যু সেই পরম আমানতের খেয়ানত না করার প্রতিজ্ঞাই আমাদেরকে কাঙ্খিত বাংলাদেশ এনে দিতে পারে। ইনশাআল্লাহ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেটা করবো।’
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: