বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আরাফাত আবাসিক এলাকায় উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
নির্দলীয় সরকারের অধীনেই ‘জুলাই সনদের’ আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে সেই আলোকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় ঘোষণাকে ইতিবাচক বলা হলেও, প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হবে।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, সারা দেশে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের অনুকূলে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ অবাধ ও নির্বিঘ্নে নিজেদের ভোট প্রয়োগ করতে পারলে ইসলামী আদর্শের শক্তিকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করবে।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট-বাকশালী আওয়ামী লীগ সরকার ভিন্ন একটি দেশের প্রেসক্রিপশনে ক্ষমতায় এসে দেশের আলেম-ওলামাদের ওপর জেল-জুলুম চালিয়েছে। ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের লজ্জাজনক পতন হয়েছে। তাই আগস্ট বিপ্লবকে অর্থবহ ও টেকসই করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বাংলাদেশের অতীতের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদের প্রণয়নের কাজ সুসম্পন্ন করে বর্তমান সরকারকেই তা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এই সনদের ভিত্তিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি।
আরাফাত নগরের চকমথুরাবাদ ভোট কেন্দ্র কমিটির সভাপতি মো. মতিউর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে ও হরিণটানা থানার ৪ নং ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি মো. আমির হোসাইনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম ও মিয়া গোলাম কুদ্দুস, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন, হরিণটানা থানা আমীর আব্দুল গফুর, ডুমুরিয়া উপজেলা নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, ইসলামীর আন্দোলন বাংলাদেশের হরিণটানা থানা নেতা হারুন অর রশীদ ও উপজেলা হিন্দু কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেবক প্রসাদ।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন সোনাডাঙ্গা থানা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা জাহিদুর রহমান নাঈম, খুলনা জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহকারী সেক্রেটারি আল আমিন গোলদার, হরিণটানা থানা জামায়াতের সেক্রেটারি এডভোকেট ব ম মনিরুল ইসলাম, মো. সেলিম বাহার, মো. মশিউর রহমান রমজান, মাওলানা ইমরান হোসেন, ডা. মো. ইসমাঈল হোসেন, মো. রফিকুল ইসলাম, রাসেল গাজী, আব্দুল বারেক মোল্লা, মো. শহিদুল, মো. কামাল হোসেন, মো. মুজাদিুল ইসলাম, মো. মজিবুর রহমান, হাফেজ মাওলানা আব্দুর রহিম প্রমুখ।
এই সমাবেশের প্রধান অতিথি মিয়া গোলাম পরওয়ারের হাতে ফুল দিয়ে ইউপি মেম্বর আবুল কালাম, সোলায়মান কাজী, বাচ্চু সরদার, বিশিষ্ট সমাজ সেবক আবু বকর ও সালাহউদ্দিনসহ বিভিন্ন দল থেকে ২০ থেকে ২৫ জন নেতাকর্মী জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন।
রাষ্ট্রের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে পতিত স্বৈরাচারের অনুসারীরা সক্রিয় রয়েছে বলে মন্তব্য করে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘তাই ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আসন্ন নির্বাচনে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে হবে। আগামী নির্বাচনে দেশে ভোট বিপ্লব ঘটানোর জন্য নেতা-কর্মীদের এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন ইসলামী দলগুলোকে নেতৃত্বের আসনে দেখতে চায়। দেশে ইসলামের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে অচিরেই জনগণের সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে ইনশা আল্লাহ। কোনো ষড়যন্ত্রই জনতার বিজয়কে ঠেকাতে পারবে না।’ এখন দু’টি শ্লোগান মানুষের মুখে মুখে একটি হলো নতুন বাংলাদেশ আর অপরটি হলো দ্বিতীয় স্বাধীনতা।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আকাঙ্ক্ষা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন দ্রুত সম্পন্ন করে অধ্যাদেশ, এলএফও বা গণভোট এর মাধ্যমে আইনি ভিত্তি প্রদান করা না হলে অন্তবর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বিফলে যাবে। তাই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: